Content area
এখনো রাশিয়ার ভেতরের লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাধীন গণমাধ্যমের তথ্য গ্রহণ করে, এখনো এর বাস্তব প্রভাব রয়েছে।
প্রথম প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে Global Voices বাংলা ভার্সন
[ Image removed ]টিভি রেইন ইউটিউব চ্যানেলের উপস্থাপক টিখোন দিজিয়াদকোর ইউটিউব ভিডিওর পর্দাছবি। ন্যায্য ব্যবহার।
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরুর পর সরকার ও আক্রমণের বিরোধিতাকারী সর্বশেষ রুশ গণমাধ্যম আউটলেটও ব্লক করা হলে অনেক সাংবাদিককে দেশ ছেড়ে যেতে হয়। তখন থেকে এই দুটি আউটলেট পশ্চিমা সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চ মূলত ইউটিউব এবং বেশিরভাগ এই মঞ্চ ব্যবহারকারী সংবাদ ও মতামতের জন্যে নতুন আসা চ্যানেলগুলির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে শুরু করে।
বার্লিন থেকে কর্মরত ইকো অব মস্কো ওয়েবসাইটের সম্পাদক ম্যাক্সিম কুর্নিকভ “ওয়াই গ্রিয়ানুল গ্রেম” ইউটিউব চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন:
আমি বলবো এক সময় রাশিয়ায় পরিচালিত স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো, মূলত তাদের ভৌগোলিক অবস্থান পরিবর্তন করে কাজের ধরনকে নতুনভাবে মানিয়ে নিলেও সামগ্রিকভা ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় আত্মপ্রকাশ করা স্বাধীন রুশ-ভাষার সংবাদমাধ্যম এখন পর্যন্ত তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সংবাদমাধ্যমের এই পরিবেশটি নাগরিক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি রুশ ফেডারেশনের আগেই গড়ে উঠে এবং সম্ভবত ১৯৯০-এর দশকে এর শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত করে।
পরবর্তীতে বিশেষ করে ক্ষমতায় এসে সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করা ভ্লাদিমির পুতিনের চাপ সত্ত্বেও এই সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এদের মধ্যে কিছু মূলত আঞ্চলিক মাধ্যম ও স্বতন্ত্র সাংবাদিক এখনো রাশিয়ার ভেতরে সক্রিয়। সামাজিক মাধ্যম ও নতুন প্রযুক্তি না থাকলে এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেক বেশি কঠিন হতো। তবে এখনো রাশিয়ার ভেতরে কয়েক কোটি মানুষ স্বাধীন সংবাদমাধ্যম থেকে তথ্য পাচ্ছে, যার বাস্তব প্রভাব এখনো বিদ্যমান।
রুশ সরকার ২০২৪ সালে ইউটিউব ব্লক শুরু করলে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে রাশিয়া থেকে ইউটিউব ট্র্যাফিক আগের স্তরের মাত্র ২০ শতাংশে নেমে আসে।
তবে বিরোধীদলীয় সাংবাদিকদের পূর্বের ধারণার বিপরীতে পশ্চিমা মঞ্চগুলি তাদের রুশ দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে খুব একটা সাহায্য করেনি। “দোঝ্দ” (রেইন টিভি)-এর প্রধান সম্পাদক তিখোন দ্যাজাদকো নির্বাসিত আরেক বিরোধীদলীয় সাংবাদিক দমিত্রি কোলেজেভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন:
প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ না হলেও আমার পুরো বিশ্বাস প্রধানত বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের মতো কিছু পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে বৃহৎ প্রযুক্তিগুলি সহজেই এই ধরনের অবরোধ এড়াতে পারলেও তারা তা করতে আগ্রহী নয়। তাদের দাবি ইউটিউব অ্যাপে – সম্ভবত ইতোমধ্যে অন্তর্ভুক্ত – একটি ফিচার সক্রিয় করার কথা বললেও আমার মনে হয় বাস্তবতা হয়তো একটু বেশি জটিল। তবে তারপরও যারা অ্যাপল, গুগল ইত্যাদির মতো বিশাল প্রতিষ্ঠান তৈরি ও বিকাশ করেছেন, তারা নিঃসন্দেহে রসকমনাদজোর (রুশ সরকারের সেন্সর সংস্থা) বা রাশিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরতদের তুলনায় অনেক বেশি উদ্ভাবনী ও বুদ্ধিমান।
তাই এটা তাদের সক্ষমতার প্রশ্ন নয়। দুঃখের বিষয় তারা এটা করতে ইচ্ছুক নয়, ব্যাস। খোলা চিঠি, তাদের বা তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বিভিন্ন ফর্ম্যাটে কথোপকথনের মতো সকল চেষ্টা সত্ত্বেও গত তিন বছরে কিছুই করেনি।
আমি মনে করি, তারা আসলে পাত্তাই দেয় না। আমি যতটুকু বুঝি স্পষ্টভাবে বললে অর্থনৈতিক দিক থেকে এখন এটা তাদের একেবারেই গুরুত্বহীন বাজার। মোটের ওপর এটাকে একটাকে ধুষর অঞ্চল বলা যায়। ঝামেলায় না জড়ানো তাদের জন্যে সহজ — তাদের কর্মী কিংবা আত্মীয়স্বজন কেউ জিম্মি হতে পারে, এমন আশঙ্কাও থাকতে পারে, তাই তারা দূরত্ব বজায় রাখে। সেটা, নিঃসন্দেহে খুব দুঃখজনক — বিশেষ করে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে শত সহস্র প্রাণহানির প্রেক্ষাপটেও তাদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখনো সেই পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি: “এটা আমার ব্যাপার নয়, আমি জড়াবো না।”
রাশিয়ায় ইউটিউব বন্ধ হলেও অনেক রাজনৈতিক বিরোধী ইউটিউব চ্যানেলের সাংবাদিকের দাবি তাতে তারা দর্শকসংখ্যায় কোনো উল্লেখযোগ্য পতন দেখেননি। বরং ভিপিএন ব্যবহার করে এই চ্যানেলগুলোতে রুশদের প্রবেশে ইউটিউবের মাধ্যমে তাদের আয় বেড়েছে — কারণ পূর্ণমাত্রার আক্রমণের শুরুতে গুগল রাশিয়া-ভিত্তিক অ্যাকাউন্টগুলোর সকল আয় বন্ধ করে দেয়। দ্যাজাদকো আরো বলেন:
আশ্চর্যজনকভাবে রাশিয়ায় ইউটিউব বন্ধ হওয়াটা আসলে আমাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে। অন্য সকল রুশভাষী দর্শক নিয়ে কাজ করা চ্যানেলের মতো আমাদেরও আয় বেড়েছে। অনেক রুশ নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ইত্যাদি জায়গায় চলে গেলেও সেখান থেকেই আমাদের দেখা চালিয়ে গেছে।
রুশ-ভিত্তিক দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর প্রযুক্তিগত সমস্যার পাশাপাশি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় বিরোধী সংবাদমাধ্যমগুলো অর্থনৈতিক সমস্যায়ও পড়ে। ইউএসএইড তহবিল স্থগিতের দিন অনলাইন রুশ বিরোধী সংবাদমাধ্যম “ব্রেকফাস্ট শো”-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রবাসী রুশ দাতা বরিস ঝিমিন বলেন, মিখাইল খোদোরকোভস্কি ও তিনি ইউক্রেনের এনজিও এবং প্রবাসী রুশ বিরোধী সংবাদমাধ্যম ও এনজিওগুলোকে সাহায্য করতে চান। এই দুই নির্বাসিত রুশ দাতা অনেকে অর্থপ্রাপ্তির একটি বড় অংশ হারিয়েছে বলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অন্তত ৯০ দিনের জন্য টিকে থাকার সাহায্য দিয়ে হারানো তহবিলের একটি অংশ পূরণ করবেন।
তিন মাসেরও বেশি সময় আগে এটা হলেও এখনো তাদের অর্থায়ন চলবে কিনা তা জানা যায়নি। তবে বরিস ঝিমিন বলেছেন: “আমরা ইউএসএইডকে প্রতিস্থাপন করতে পারি না – কারণ এটা বিশাল, শত কোটি ডলারের ব্যাপার।”
মার্কিন তহবিল হারানোর পর কোনো সংবাদমাধ্যমগুলো সম্পূর্ণভাবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে কিনা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও অনেক সংবাদমাধ্যমই বিকল্প অর্থায়নের উৎস তৈরির চেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ দোঝ্দ (টিভি রেইন), ব্রেকফাস্ট শো এবং ইকো অব মস্কো (ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল বার্লিন ও কিছু অংশ মস্কো থেকে পরিচালিত) নিজেদের টি-শার্ট, বেসবল ক্যাপ, বই ইত্যাদির মতো পণ্য বিক্রি করছে। তারা বিদেশে বসবাসকারী রুশভাষী দর্শকদের জন্যে তাদের উপস্থাপক ও ভাষ্যকারদের মাধ্যমে জনসভা বা কনসার্টের আয়োজন করে তার টিকিট বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি তারা মানুষকে (রাশিয়া থেকে গ্রাহক হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে শুধু রাশিয়ার বাইরের) গ্রাহক হওয়ার অনুরোধ জানায়।
সম্প্রতি অনেক গণমাধ্যম মূলত পুসি রায়ট সদস্যদের প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার ও রাশিয়ার শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক বন্দীদের জন্যে নিবেদিত আউটলেট মিডিয়াজোনাকে সাহায্যের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। মিডিয়াজোনা ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত ১০,০০০ মাসিক গ্রাহক না পেলে টিকে থাকতে পারবে না বলে জানানোর পর অন্যান্য গণমাধ্যম ও অনেক ইউটিউব সাংবাদিক শ্রোতাদের কাছ থেকে অনুদানের আহ্বান জানায়। প্রচারণা এখনও চলছে; বর্তমানে আউটলেটটির ৫০০০-রও বেশি মাসিক গ্রাহক রয়েছে।
ইউএসএআইডি'র তহবিল বন্ধের ঘোষণার আগে কোলেজেভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিজিয়াদকো বলেন:
যুদ্ধ শুরুর পর রুশ সাংবাদিকরা দেশত্যাগ করতে শুরু করলে ডজনখানেকেরও বেশি নতুন স্বাধীন গণমাধ্যম গড়ে উঠেছে। বেশিরভাগই ছোট ও নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ভিত্তিক। অনুদানের অর্থ কমে যাওয়ায়, এদের সবাই টিকে থাকবে না। যুদ্ধের সূচনালগ্নে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির কারণে অনেক অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেই অর্থায়ন কমে এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসছে। তবে সেই তহবিলের উপর নির্ভরশীল গণমাধ্যমের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে কিছু নির্দিষ্ট-বিষয়ক সংবাদমাধ্যমকে হয়তো নিজেদের গঠন পুনর্বিন্যাস করতে, বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হতে, অথবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। এটা ভাল কোনো লক্ষণ নয়। বৈচিত্র্যময় সংবাদমাধ্যমের পরিসর, সমাজের জন্যে বেশি উপকারী হলেও পরিস্থিতিটি এড়ানো প্রায় অসম্ভব।
ম্যাক্সিম কুর্নিকভ ইকো অব মস্কোর প্রবাসী প্রকল্পগুলির আর্থিক পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন:
বেশিরভাগ নির্বাসিত গণমাধ্যমের মতো এটি কঠিন। আমাদের তহবিলের অভাব থকলেও আমাদের দর্শক বাড়ছে। আমরা বই প্রকাশ করছি, অনুষ্ঠান করছি। আমরা সম্প্রতি ১৯৯০-এর দশকে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছি এবং শীঘ্রই গর্বাচেভ ও পুতিনের শাসনামলে রুশ অর্থোডক্স গির্জার ইতিহাস নিয়ে আরেকটি বই প্রকাশ করব। আমরা বক্তৃতা-সফরেও যাচ্ছি।
এদিকে দিজিয়াদকো বলেছেন আর্থিক সহায়তার জন্যে বিরোধী গণমাধ্যমকে এখন আগের চেয়েও বেশি দর্শকদের উপর নির্ভর করতে হবে।
(English) ভাষায় লিখেছেন Daria Dergacheva(বাংলা) ভাষায় অনুবাদ করেছেন Arif Innasমূল লেখাটি দেখুন (English)কিছুটা উচ্চবাচ্য মঙে হলেও এটা একেবারে সত্য: দোঝ্দ-এর ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে আমাদের দর্শকদের হাতে। সম্প্রচারে অনুদানের অনুরোধ করে আমরা যখন বলি, “আমরা আপনাদের কারণেই চলছি,” তখন সেটাই নিখাদ সত্য। আমাদের অর্থায়নের একটা অংশ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এলেও সেই অর্থ চিরস্থায়ী নয় — তা অনিবার্যভাবেই সীমিত। আমরা এখন কিছু বিজ্ঞাপন আয়ও পেতে শুরু করেছি, মাসে মাসে ধীরে ধীরে বাড়ছে। সেটা খুবই ইতিবাচক হলেও আসল বিষয় হলো, আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার ক্ষমতা আসে এই বিশ্বাস থেকে যে আমাদের দর্শকরা আমাদের পাশে রয়েছেন — বিশেষ করে যারা নিয়মিতভাবে অনুদান দেন। সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ দেখার শক্তি দেয়।
বিশ্বের লক্ষ লক্ষ রুশভাষী মানুষ তাদের বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম সমর্থন করতে প্রস্তুত। সেই সমর্থন উৎসাহিত করতে ও বজায় রাখতে আপনাকে সঠিক সুরটি খুঁজে বের করতে হবে।
The views expressed in any and all content distributed by Newstex and its re-distributors (collectively, the "Newstex Authoritative Content") are solely those of the respective author(s) and not necessarily the views of Newstex or its re-distributors. Stories from such authors are provided "AS IS," with no warranties, and confer no rights. The material and information provided in Newstex Authoritative Content are for general information only and should not, in any respect, be relied on as professional advice. Newstex Authoritative Content is not "read and approved" before it is posted. Accordingly, neither Newstex nor its re-distributors make any claims, promises or guarantees about the accuracy, completeness, or adequacy of the information contained therein or linked to from such content, nor do they take responsibility for any aspect of such content. The Newstex Authoritative Content shall be construed as author-based content and commentary. Accordingly, no warranties or other guarantees are offered as to the quality of the opinions, commentary or anything else appearing in such Newstex Authoritative Content. Newstex and its re-distributors expressly reserve the right to delete stories at its and their sole discretion.
Copyright Newstex May 22, 2025